বিউটি অ্যান্ড হেয়ার স্যালোঁ শাওন’স্ নতুন শাখা খুলল যাদবপুরে

শ্রীজিৎ চট্টরাজ –
সেই প্রায় মানুষের যুগ থেকে মানুষ অঙ্গসজ্জায় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার শুরু করেছিল মূলত আত্মরক্ষার তাগিদে। হিংস্র বন্য বিকটকায় প্রাণীদের নজর এড়াতে গাছের ফাঁকে মিশে যেতে সবুজ, কালো, খয়েরী ও হলুদ রঙের উলকি কাটত তারা শরীরে। এরপর বয়সের বয়স বেড়েছে। প্রায় মানুষ পূর্ণ মানুষ হয়েছে । নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার তাগিদ অনুভব করেছে । এরপর সময় যত এগিয়েছে অঙ্গসজ্জার সঙ্গে সঙ্গে কেশ সজ্জারও চল হয়েছে। শোনা যায় ,ক্লিওপেট্রার চুল ধোয়ার জল তৈরি হতো ইরান থেকে আনা বসরাই গোলাপ দিয়ে। স্নান করতেন তিনি গাধার দুধে। তবেই না দুধে আলতা রঙে জেল্লা খুলত।আমাদের দেশেও সাদা চামড়ার প্রতি দুর্বলতা আজও থেকে গেছে। তাই বুঝি কালো মেয়ের অভিভাবক পত্রিকার পাত্র চাই বিজ্ঞাপনে লেখেন উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা। সুন্দরী লিখতে জড়তা থাকলে সুশ্রী।

সময় পাল্টেছে। রূপ সজ্জার কারিগরদের জাদুগরি অঙ্গুলি হেলনে এখন সুশ্রী হচ্ছেন সুন্দরী। উজ্জল শ্যামবর্ণা পাচ্ছেন নতুন লুক। উত্তমকুমারই তো স্ত্রী ছবিতে গেয়েছেন মান্না দের গলায়, সে যতই কালো হোক আমার ভালো লেগেছে। বাংলায় রূপ সজ্জার সঙ্গে কেশ সজ্জারও এক যুগলবন্দি ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে নাতনির চুল বাঁধতে গিয়ে ঠাকুমা ছড়া কাটতেন, পদ্মফুলে ভোমরা ভোলে/ওলো, খোঁপায় ভোলে বর / নাতনি লো , তোর খোঁপা দেখে/ হবে সতীন জড় জড়। ইঙ্গিত ছিল কেশ সজ্জায় চমক এনে সতীন থেকে স্বামীর নিজের দিকে চোখ ফেরানো। সেযুগে নাকি গুপ্তিপাড়া আর শান্তিপুরের মেয়েদের খোঁপা ছিল বিখ্যাত। ছিল কত নামের খোঁপা। স্বামী ভুলানো, ল্যাজ বিনুনি, কলকে ফুল, সইয়ের বাগান, উকিলের কানের কলম, বাবুর বাগানের ফটক খোলা ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রসাধনীতে জাফরান ভেজানো দুধ, মধু, খড়ি মাটি, পশুর মল ও চর্বি, ফুলের নির্যাস, সামুদ্রিক লবণ ইত্যাদির চল পেরিয়ে আমাদের বঙ্গদেশে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাথায় তেল, আর সাবান কিম্বা রিঠে আর ছোবড়ার সহবস্থান।
ইতিমধ্যেই সেলুনের আবিষ্কার । সেলুন শব্দের অর্থ ছিল বিনোদনের জন্য বড় কোন জন সমাবেশের কক্ষ। একটা সময়ে অঙ্গসজ্জায় আর কেশসজ্জায় ক্রেতা আকর্ষণের জন্য বিনামূল্যে দুপুরের খাবার দেওয়া হতো। আজ সেলুন ব্রাত্য শব্দ। প্রচলন হয় বিউটি পার্লার শব্দ। এখন আবার এই শব্দটিও ক্লিশে। এখন চল স্যালোঁ। যেখানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে আপনার শরীরে গ্রহণযোগ্য প্রসাধনী প্রয়োগ হয়। চুলের বাহারেও আপনার মুখশ্রীর মানানসই শৈল্পিক নির্মাণ করা হয়। যাঁরা করেন, তাঁরা বিশেষভাবে পেশাদার শিক্ষাক্রমে শিক্ষিত হয়েই আসেন

কোলকাতা এখন ভারতের অন্যতম অঞ্চল স্টাইলে।
শুক্রবার যাদবপুরে বিজয়গড় অঞ্চলে বিউটি অ্যান্ড হেয়ার স্যালোঁ শাওন’স নতুন শাখার উদ্বোধন হলো। এখানে থাকছে রূপচর্চা, রুপসজ্জা ও কেশ সজ্জার ব্যবস্থা। ব্যবহার করা হচ্ছে, উন্নতমানের উপাদান। উদ্বোধনে হাজির হলেন বিনোদন জগতের দেবলীনা কুমার, দেবযানী চ্যাটার্জি, শাঁওলি চ্যাটার্জি প্রমুখ। সংস্থার পক্ষে দুই কর্ণধার রক্তিম গোস্বামী ও শাওন জানালেন, শুরুটা তাঁদের উত্তর কলকাতায়।কারণ ওঁরা থাকেন সেখানে। দুটি শাখার একটি দমদম নাগের বাজার অঞ্চলে অন্যটি দমদম সেভেন ট্যাঙ্কস অঞ্চলে। ছোট থেকেই ছিল শাওনের রূপসজ্জা আকর্ষণ। কেশসজ্জায় দুর্বলতা। এখন জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে গ্রুমিং অতি আব্যশিক।বিনোদন জগতে পদার্পণ করে শাওনের মনে হয়েছিল সঠিক রীতি পালন হচ্ছে না। তাই পেশাদারী ভিত্তিতে বিপনীর ভাবনা।
দক্ষিণ কলকাতার মধ্যে তৃতীয় শাখা তৈরিতে যাদবপুরের বিজয়গড় বেছে নেওয়ার কারণ, মনে হয়েছে এখনও এই অঞ্চলে পরিবারের সবার জন্য স্যালোঁ সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। তাই এলাকার মানুষদের স্বার্থে এখানে শাখার উদ্বোধন। শাওন ও রক্তিমের স্থির বিশ্বাস, পরিষেবায়তাঁরা সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের মন জয় করতে পারবেন।